• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

সরাসরি এশিয়া কাপের সুপার ফোরে বাংলাদেশ

প্রকাশ:  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:২২
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

এশিয়া কাপের সুপার ফোরের আশা বাঁচিয়ে রাখতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সামনে জয়ের বিকল্প ছিল না। টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াইয়ে আগে ব্যাট করে ৩৩৪ রানের বড় পুঁজি দাঁড় করায় টাইগাররা, যা ওয়ানডে সংস্করণের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।

ওয়ানডে ক্রিকেটে কখনোই ৩০০ বা এর বেশি রানের স্কোর তাড়া করে জিততে পারেনি আফগানিস্তান। তবে বড় লক্ষ্যের মুখে পড়েও ভড়কে যায়নি আফগানরা। ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান আর অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহীদীর অর্ধশতকে ভালোই জবাব দিচ্ছিল তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৪৪.৩ ওভারে ২৪৫ রানেই গুটিয়ে গেল আফগানরা।

এশিয়া কাপের সুপার ফোরে সরাসরি পা রাখার জন্য আফগানদের কমপক্ষে ৫৫ রানে পরাজিত করতে হতো। তবে রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮৯ রানের জয় তুলে নিয়ে সুপার ফোরের টিকেট পেয়ে গেল টাইগাররা।

জয়ের জন্য ৩৩৫ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় আফগানিস্তান। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ১ রানে শরিফুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। আফগান ওপেনার রিভিউ নিলেও আম্পায়ার্স কলে তাকে মাঠ ছাড়তে হয়।

গুরবাজের বিদায়ের পর আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও রহমত শাহর জুটিতে ভালোই প্রতিরোধ গড়েছিল আফগানিস্তান। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেন ৭৮ রান। ১৮তম ওভারে তাসকিনের বলে বোল্ড হন রহমত। সাজঘরে ফেরার আগে ৫৭ বলে পাঁচ বাউন্ডারিতে ৩৩ রান করেন তিনি।

নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আফগানিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করলেও বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে ছিলেন ইব্রাহিম জাদরান। হাশমতউল্লাহ শাহিদির সঙ্গে মিলে টাইগার বোলারদের ভালোই যন্ত্রণা ছিলেন এই ডানহাতি আফগান ওপেনার। ইনিংসের ২১তম ওভারে অর্ধশতক হাঁকান তিনি।

শেষ পর্যন্ত ২৮তম ওভারে জাদরানকে ফেরাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। হাসান মাহমুদের সিম-আপ ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়েছিলেন তিনি। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটিকে দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত করেন উইকেটরক্ষক মুশফিক। আউট হওয়ার আগে ৭৪ বলে দশ চার ও এক ছয়ে ৭৫ রান করেন এই আফগান ব্যাটার।

ইব্রাহিম জাদরানে বিদায়ের পর বাংলাদেশের সামনে বড় হুমকি হয়ে উঠেছিলেন আফগানিস্তান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহীদী। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন নাজিবউল্লাহ জাদরান। ৩৬তম ওভারে ফিফটি তুলে নেন হাসমতউল্লাহ। তবে পরের ওভারে নাজিবউল্লাহকে বোল্ড করেন মিরাজ। প্যাভিলিয়নের পথ ধরার আগে ১৭ রান করেন নাজিবউল্লাহ।

পরের ওভারে নাজিবউল্লাহর পথ অনুসরণ করেন হাসমতউল্লাহ। শরিফুল ইসলামের বলে লং অনে হাসান মাহমুদের হাতে ক্যাচ তুলে দেন আফগান অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ৬০ বলে ছয় বাউন্ডারিতে ৫১ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।

আফগানিস্তানের অধিনায়ককে ফেরানোর পরই ম্যাচ একরকম বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় এসে যায়। বাকি ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। ৪৯ রানের মধ্যে আফগানদের শেষ পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে সেই আনুষ্ঠানিকতা সারে টাইগাররা। মাঝে তিন বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় রশিদ খানের ১৫ বলে ২৪ ইনিংসটা শুধু পরাজয়ের ব্যবধানটাই যা কমাতে পেরেছে শুধু। ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সফলতম হলেন তাসকিন। এছাড়া আরেক পেসার শরিফুল নিয়েছেন ৩ উইকেট।

এর আগে, টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তানজীদ হাসান তামিম বাদ পড়ায় আফগানদের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে মোহাম্মদ নাঈম শেখের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এর আগে শুধু ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালেই ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন মিরাজ।

লাহোরের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুরু থেকেই ব্যাটিংয়ে আক্রমণাত্মক ছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে নাইম একটু বেশিই মারমুখী ছিলেন। শুরুতে খোলসবন্দি থাকলেও পরে তার সঙ্গে হাত খুলেন মিরাজও। দুজনের ব্যাটে ভর করে পাওয়ারপ্লেতে দারুণ শুরু করেছে টাইগাররা। সেই সঙ্গে সাত ম্যাচ পর ওপেনিং জুটিতে ৫০ রানের সাক্ষী হয় বাংলাদেশ।

তবে পাওয়ারপ্লের পর হুট করেই দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আফগান স্পিনার মুজিব উর রেহমানের করা ইনিংসের দশম ওভারের শেষ বলে বোল্ড হন এই বাঁহাতি ওপেনার। সাজঘরে ফেরার আগে পাঁচটি বাউন্ডারির সাহায্যে ৩২ বলে ২৮ রান করেছেন নাঈম। তার বিদায়ের পর মিরাজের সঙ্গে জুটি বাঁধা তাওহীদ হৃদয় ফিরে যান দুই বল পরেই। একাদশ ওভারে গুলবদিন নাইবের বলে ইব্রাহিম জাদরানের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে রানের খাতা খুলতে পারেননি হৃদয়।

এরপরের গল্পটা যেন শুধুই আরেক ওপেনার মিরাজ ও শান্তর। তৃতীয় উইকেটে দুজন মিলে যোগ করেন ১৯৪ রান। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালের ওপর আবারও উদ্বোধনী ব্যাটার হিসেবে মাঠে নামা মিরাজ ইনিংসের ৪১তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন। তবে মুজিবের করা ৪৩তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারতে গিয়ে বাঁ হাতের আঙুলে আঘাত পেয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন। ১১৯ বল খেলে সাত বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ১১২ রানে অপরাজিত ছিলেন মিরাজ।

পিছিয়ে ছিলেন না আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিফটি করা শান্তও। মিরাজের মাঠ ছাড়ার দুই বল পরই তার মতো ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় শতক হাঁকান এই বাঁহাতি ব্যাটার। তবে সেঞ্চুরি করার পর বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি শান্ত। ৪৫তম ওভারে বল সুইপ করে সিঙ্গেল নিতে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরও ফিরতে গিয়ে পিছলে গিয়ে রানআউট হন শান্ত। সাজঘরে ফেরার আগে ১০৫ বলে ৯ চার ও দুই ছক্কায় ১০৪ রান করেন তিনি।

মিরাজ-শান্ত শক্ত ভিত এনে দেওয়ার পর একসময়ে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের সংগ্রহ কমপক্ষে ৩৫০ রান হবে। সেটি না হলেও স্কোরবোর্ডে ৩৩৪ রানের সংগ্রহ দাঁড় করানোর বড় কৃতিত্ব উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম এবং অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। সাকিবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হওয়ার আগে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৫ বলে ২৫ রান করেন মুশফিক। মুশফিক ফিরে গেলেও শেষদিকে আফগান বোলারদের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে চারটি বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ১৮ বলে ৩২ রান করে অপরাজিত থাকেন সাকিব।

এশিয়া কাপ,বাংলাদেশ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close