ভোটে অনিয়ম: শরীয়তপুরে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে শোকজ
ভিন্ন রকম এক ভোটের খবর। যেখানে মৃত ব্যক্তিরাও দিয়েছে ভোট, বাদ পড়েনি প্রবাসীরাও। শুনতে সিনেমার মতো মনে হলেও এমনটাই ঘটেছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে।
যেখানে ফলাফল বিজ্ঞপ্তিতে রয়েছে ব্যাপক গরমিল, ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয়েছে শতভাগ। তবে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের দায়ে শোকজ করা হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে। নড়িয়া উপজেলা নির্বাচনী অফিস ও রিটানিং কর্মকর্তা ওই প্রিজাইডিং অফিসারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নটিতে এমন ভোটকাণ্ডে হতবাক সাধারণ ভোটাররা। এ নিয়ে ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলনে ফলাফল বর্জন করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে পরাজিত প্রার্থী ও সমর্থকরা।
নড়িয়া উপজেলা রিটানিং অফিসারের কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, ৫ম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৫ জানুয়ারী। এ ধাপে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ভাটগ্রহণে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ করেছেন ইউপির পরাজিত ৩নং ওয়ার্ডের ফুটবল মার্কার মেম্বার প্রার্থী মাছুম হাওলাদার ও মোরগ মার্কার প্রার্থী মামুন হাওলাদার।
তাদের অভিযোগ, ওই ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্তরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। কেন্দ্রটিতে শতভাগ ভোট পড়েছে বলে (গত ৫ জানুয়ারী) ফলাফল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন নড়িয়া উপজেলার নির্বাচন কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটানিং কর্মকর্তা। পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরে আগের ফলাফল সংশোধন করে (১০০ পরিবর্তে ৭৫%) কাস্ট দেখিয়ে নির্বাচনী সার্ভারে পুনরায় ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল।
নড়িয়া উপজেলাধীন ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নটি ৯টি ওয়ার্ড দ্বারা গঠিত। ইউনিয়নটিতে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় আঠারো হাজার। ৫ম ধাপে ইউপি নির্বাচনে ভোটকাণ্ডে রীতিমতো হতবাক ওই ইউনিয়নটির স্থানীয় ভোটারও। মৃত, জীবিত ও প্রবাসীদের ভোট কারা দিলো? এমন প্রশ্ন এখন এলাকাবাসীর?
ইউনিয়নটির ৩নং কেন্দ্রের ১০০ নং দেওজুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে শতভাগ ভোটা পড়া নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়েছে এলাকায়। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের দায়ে ইতোমধ্যে শোকজ হয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নড়িয়া উপজেলার আইসিটির' সহকারি প্রোগ্রামার রমজান আলী। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।
রমজান আলী বলেন, নির্বাচনী দায়িত্ব এই প্রথম পালন করায় ভুল হয়েছে। পরবর্তীতে সেটাকে সঠিক করে প্রকাশ করা হয়েছে। এর দায় আমার, আমি ভুল স্বীকার করছি।
নির্বাচনী কর্মকর্তার একাধিক ফলাফল ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খাঁন। তার অভিযোগ, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নড়িয়া রিটানিং অফিসার তার পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। তাই তিনি পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
এ নিয়ে জানতে নড়িয়া উপজেলা নির্বাচন অফিস ও রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। কিন্ত জেলা নির্বাচন অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। নড়িয়া উপজেলায় ৫ম ধাপের নির্বাচনে কোন দলীয় প্রতিক ছাড়াই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পূর্বপশ্চিম/এসকে