• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

শরীয়তপুর রেকর্ড রু‌মে ঘুষ ছাড়া মেলে না সেবা

প্রকাশ:  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:৪০ | আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:৪৩
শরীয়তপুর প্রতিনিধি

শরীয়তপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যাল‌য়ে রেকর্ড রু‌মে ব্যাপক অ‌নিয়ম ও ঘুষ ছাড়া সেবাপ্রার্থীদের রীতিমতো হয়রানির অ‌ভি‌যোগ উ‌ঠে‌ছে।

রেকর্ড রু‌মে দা‌য়িত্বপ্রাপ্ত ক‌য়েকজন অ‌ফিস স্টাফ নিয়মনী‌তি না মে‌নে নি‌জে‌দের ই‌চ্ছে মতো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র (নকল) বা‌হি‌রে সরবরাহ কর‌ছেন। য‌দিও রেকর্ড রু‌ম থে‌কে সইমুহুরী ছাড়া এভা‌বে কাগজপত্র সরবরাহ ব‌ন্ধে জেলা প্রশাস‌কের ‌নি‌র্দেশ র‌য়ে‌ছে। তবুও অ‌ফিস স্টাফ‌দের অ‌নিয়‌ম বন্ধ হয়‌নি।

শরীয়তপুর রেকর্ড রু‌মের অ‌নিয়‌মের চিত্র (ভি‌ডিওসহ) 'সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ্যমে ভাইরাল হ‌য়ে‌ছে। ওই ভি‌ডিও ফু‌টে‌জে দেখা গে‌ছে অ‌ফি‌সের নিয়ম না মে‌নেই রেকর্ড রুম সহকারী ফারজানা আক্তার মুক্তা সেবাপ্রার্থীকে ন‌থি থে‌কে পর্চার কাগজপত্র বা‌হি‌রে সরবরাহ কর‌ছেন। অন্যদি‌কে আ‌রেক‌টি ফু‌টে‌জে দেখা যায়, জেলা প্রশাস‌কের কার্যাল‌য়ের এক কর্মচারী পর্চাখানার ভিত‌রে দাঁড়িয়ে টাকা গুনেগু‌নে নি‌চ্ছেন। এছাড়া আ‌রো ক‌য়েকজনের অ‌নিয়‌মে জ‌ড়িত থাকার চিত্র উ‌ঠে এ‌লেও তা‌দের নাম-প‌রিচয় জানা সম্ভব হয়‌নি।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জমির খ‌তিয়ান, নকশা, পর্চাসহ জমিজমা সংক্রান্ত বি‌ভিন্ন নথি তুলতে গি‌য়ে অ‌তি‌রিক্ত টাকা গুন‌তে হ‌চ্ছে সেবাপ্রার্থী‌দের। তা‌দের নির্ধারিত ফির চেয়ে অ‌তি‌রিক্ত টাকা দিলেই মে‌লে সেবা। এতে ক‌রে সেবাপ্রার্থীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ ক‌রে‌ছেন। য‌দিও রেকর্ড রুমের অ‌নিয়ম ও দুর্নীতি সা‌থে জ‌ড়িত কর্মচারীদের একাংশ বহাল তবিয়তে বছ‌রের পর বছর রেকর্ড রুমের দা‌য়ি‌ত্বে র‌য়ে‌ছেন।

জেলা প্রশাস‌কের কার্যাল‌য় ও রেকর্ড রুম সূত্রে জানা গে‌ছে, জমি-জমার নকশা, পর্চা, মামলার নথি নিতে প্রথমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ফ্রন্ট ডেক্সে সইমুহুরীর আবেদন করতে হয়। সেখানে আবেদন করতে ২০ টাকা ও ২ টাকা কোট ফি দিতে হয়। মামলার নথি ও অন্যান্য কাগজের ক্ষেত্রে একই আবেদনের উপর ছোট-বড় অনুযায়ী ৫ টাকা দামের সর্বোচ্চ ৫০টি পর্যন্ত কাগজ লাগাতে হয়। জায়গার নকশা বা মৌজার ম্যাপের জন্য ৫০০ টাকার ট্রেজারি চালান জমা দিতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের ফ্রন্ট ডেক্সে আবেদন করলে সেবা প্রার্থীরা ৩ কর্ম দিবসের মধ্যে তাদের সইমুহুরী কাগজ সরবরাহ করবে। কিন্তু সেবাপ্রার্থীরা সব বিধিমালা অনুসরণ করে আবেদন করলেও তাদের দিতে হয় নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা। এছাড়া রেকর্ড রুমে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ থাকলেও অহরহ ঢুক‌ছে ব‌হিরাগতরা। অ‌ফিস স্টাফরাও কেচি গেট লাগিয়ে চা‌হিদা মা‌ফিক আদায় ক‌রে থা‌কেন অর্থ। সরকারি বিধি মোতাবেক সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অফিস খোলা রাখার নিয়ম থাকলেও শরীয়তপু‌রের রেকর্ড রুমের কার্যক্রম চ‌লে রাত ৮টা পর্যন্ত। জেলা প্রশাসক কার্যাল‌য়ের কিছু অসাধু কর্মচারী ও স্থানীয় কিছু দালালের যোগসাজ‌সে সরকারি নির্দেশ অমান্য করেই দি‌নের পর দিন চল‌ছে অ‌নিয়ম। ত‌বে অ‌ফি‌সের নিরাপত্তা ও দালালদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে এক‌টি সিসি ক্যামেরা লাগা‌নো হলেও তা কোন কা‌জে আস‌ছে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

পর্চাখানার হয়রা‌নি এড়া‌তে সেবাপ্রার্থীরা ‌নি‌জে‌র প‌রিচয় গোপন রাখার শ‌র্তে জানান, ১০-১২ দিন ঘু‌রেও কাঙ্ক্ষিত কাগজ হা‌তে পাই‌নি। প‌রে একটা মাধ্যমে কিছু টাকা দেওয়ার শ‌র্তে কাগজ আজ দি‌বে ব‌লে আশ্বাস দি‌য়ে‌ছে। এখন য‌দি আমার নামটা কোনো ভা‌বে জা‌নে তাহ‌লে অ‌নেক সমস্যায় পড়‌তে হ‌বে।

আ‌রেক ভুক্তভুগী ব‌লেন, মি‌ডিয়া‌র কা‌ছে কোন সমস্যার কথা জানা‌লে সমস্যা আ‌রও জ‌টিল হয়। তারপর মা‌সের পর মাস পার হ‌লেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া যায় না। এই জেলার ৬‌টি উপ‌জেলার মানুষ এখা‌নে (পর্চাখানা) আস‌তে হয়। তাই যে যেভা‌বে পা‌রে কাজ শেষ ক‌রে। পর্চাখানার প্রতি‌দি‌নের চিত্র একই।

অ‌নিয়‌মে জ‌ড়িতরা মি‌ডিয়া‌তে কথা বলা নি‌ষেধ অযুহা‌তে প্রতিবেদককে এ‌ড়ি‌য়ে গে‌ছেন। ত‌বে রেকর্ড রুমের দা‌য়িত্বপ্রাপ্ত রেকর্ড কিপার আবদুর রশিদ বলেন, ‘এখান থে‌কে পর্চা বা অন্যান্য কাগজ তুলতে কোন অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না।’ কিন্তু নিয়ম ছাড়াই, বা‌হি‌রে বি‌ভিন্ন ন‌থির নকল সরবার‌হের বিষ‌য়ে জান‌তে চাই‌লেও তি‌নি এর কোন সদুত্তর দি‌তে পা‌রে‌নি।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, রেকর্ড রুমের কিছু সমস্যার কথা শু‌নে‌ছি। অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত চল‌ছে। পরবর্তী‌তে জ‌ড়িত‌দের বিরু‌দ্ধে ক‌ঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


পূর্বপশ্চিম/এসকে

শরীয়তপুর

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close