• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

আদালতের রায় উপেক্ষিত, হুমকির মুখে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী

প্রকাশ:  ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৫১ | আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৫৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
কারখানার ফটকে ফেলে রাখা বালু। ছবি- সংগৃহীত

গাজীপুরে আদালতের রায় উপেক্ষা করে নীট সিটি লিমিটেড নামে এক পোশাক কারখানার ব্যবসায়ীকে নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী বলছেন, কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পরে ওই বাড়ির মালিক তাকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করে। এ নিয়ে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হলে তাকে কার্যক্রম চলমান রাখার আদেশ দেন। কিন্তু বাড়ির মালিক এরপরেও নানাভাবে ওই ব্যবসায়ীকে হয়রানি করছেন। এ ঘটনায় প্রশাসনিক সহায়তা পাচ্ছেন না বলেও জানান তিনি। এতে উৎপাদন, রপ্তানি ব্যহত ও কোটি কোটি টাকা লোকসানে পড়েছেন ওই ব্যবসায়ী।

তবে অভিযুক্ত বাড়ি মালিকের দাবি, আদালত ভুল বুঝে একতরফা রায় দিয়েছেন। এছাড়া হয়রানি নয় বরং তিনি স্বাভাবিক কাজ করছেন বলে দাবি করেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মোগরখাল এলাকায় ঘটেছে এ ঘটনা। অভিযুক্ত বাড়ির মালিকের নাম খাইরুল ইসলাম।

অভিযোগ সূত্র ও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জানান, ২০১৪ সালে ওই জমিতে একতলা ভবন ছিল। পরে এককালীন অর্থ দিয়ে মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে ভবনটি ভাড়া নিয়ে পোশাক কারখানা চালু করেন। পরবর্তীতে ব্যবসা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ির মালিকপক্ষকে আরও অর্থ নিয়ে ভবনটি চতুর্থ তলা পর্যন্ত বর্ধিত করেন ও কারখানায় বিভিন্ন মেশিনারিজ আমদানি করেন। এতে তিনি ১৫-১৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। বড় কারখানা শুরু হওয়ার পরই বাড়ির মালিকপক্ষ কারখানার ঝুটের ব্যবসা দাবি করেন। সেটা না দেওয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদে নানা হয়রানি শুরু করেন বাড়ির মালিক। বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত।

২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর আদালত নির্দেশ দেন বিষয়টি মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত কারখানা মালিক তার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন ও বাড়ির মালিক তাকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না। তবে সেই নির্দেশ অমান্য করে পোশাক কারখানার নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর হামলা, মূল ফটকে বালু রেখে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, শ্রমিক কর্মচারীদের নানা ভাবে হুমকিধামকিসহ বিভিন্ন উপায়ে হয়রানি শুরু করে বাড়ির মালিক। এ ঘটনায় প্রশাসনিক সহায়তাও পাননি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর।

নীট সিটি লিমিটেড কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর নজরুল ইসলাম জানান, তাদের কারখানাটি পুরোপুরি রপ্তানিমুখী একটি পোশাক কারখানা। এই কারখানায় উৎপাদিত তৈরি পোশাক বিশ্বের নামী দামী কোম্পানির গ্রাহকদের কাছে বিক্রি ও রপ্তানি করে কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকেন। কিন্তু পোশাক কারখানাটির জন্য ভাড়া নেয়া ভবনটির মালিকপক্ষ নানাভাবে তাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই ভবনটি ভাড়া নিয়ে ১৫/১৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পর মালিকপক্ষ নানা রকমভাবে এর আগেও উৎপাদন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায় ও ক্ষতির মুখে ফেলে। এসব নিয়ে পোশাক কারখানার মালিকপক্ষ উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ভবনটির মালিকপক্ষ কারখানার শ্রমিক কর্মচারীদের উপর হামলা করে, হুমকি দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। সবশেষ কয়েকদিন আগে কারখানার মূলফটকে উঁচু করে কয়েক ট্রাক বালু ফেলে কারখানার শ্রমিক কর্মচারীদের আসা যাওয়া প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এর উপর দিয়েও কোনোভাবে শ্রমিক কর্মচারীরা আসা-যাওয়া করতে থাকলেও তাদের উপর হামলা করা হচ্ছে, নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এসবের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে কারখানাটির উৎপাদন কার্যক্রম এবং রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে।

তিনি আরো বলেন, একটা ভয়ঙ্কর বাজে অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে শুধু এই কোম্পানি বা আমাদের ক্ষতি হচ্ছে না, রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে না পারায় দেশের অর্থনীতিরই একটা ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয় আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীকে ও বিষয়টি জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি এর দ্রুত প্রতিকার দাবি করছেন।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাড়ির মালিকপক্ষের খাইরুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ভবন ভাড়া নিয়ে এখন পর্যন্ত কিভাবে আছে সেটা নজরুল সাহেবই ভালো বলতে পারবেন। আদালতকে ভুল বুঝিয়ে একতরফা একটা রায় নিয়েছে যেটার কোন ভিত্তি নেই। আমরা এ বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিউজ করিয়েছি, বিশেষ করে যমুনা টিভিতেও নিউজ করানো হয়েছে। সর্বশেষ আমাদের লিখিত বক্তব্য আদালতে পেশ করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের সামনে বালু রাখার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাড়ির সামনে আমার লোকজন যাবে আসবে এটাই স্বাভাবিক। তারা সেখানে কী করবে না করবে সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত বিষয়। এ বিষয়ে কাউকে জবাবদিহি দিতে চাই না।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ওখানে অনেকগুলো সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। তাদের সিসি ফুটেজ দিতে বলুন কারা হামলা চালিয়েছে, বের হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে গাজীপুর মহানগরের বাসন থানার ওসি আব্দুল মালেক খসরুকে ফোন করলেও তিনি কল ধরেননি।

আদালত

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close