• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

চান্দু স্টেডিয়াম ইস্যুতে বিসিবি-জেলা ক্রীড়া সংস্থার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

প্রকাশ:  ০৩ মার্চ ২০২৩, ১৬:০১ | আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৩, ১৮:০৭
বগুড়া প্রতিনিধি
স্টেডিয়ামটি থেকে সরঞ্জাম সরিয়ে নিয়েছে বিসিবি।

দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের আওতাধীন থাকার পর হঠাৎ করেই বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে (এনএসসি) পাঠানো চিঠিতে বিসিবি জানায়, বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার অসহযোগিতার কারণে স্টেডিয়ামটি তারা ব্যবহার করতে পারেনি।

এদিকে, জেলা বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা পাল্টা বিসিবির অসহযোগিতার কথা বলেছে। তারা পাল্টা চিঠিতে বিসিবির অসহযোগিতার অভিযোগ করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।

গত বুধবার এনএসসি বরাবর বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট লিগ/টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আসছে। বিগত কয়েক বছর বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার অসহযোগিতার ফলে স্টেডিয়ামটিতে বিসিবি নিয়মিতভাবে টুর্নামেন্ট/ লিগ আয়োজন করতে পারছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতেই স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। ভেন্যুতে কর্মরত বিসিবির সব কর্মকর্তা/কর্মচারীকে ইতোমধ্যে অন্য ভেন্যুতে বদলি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদুর রহমান মিলন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক মানের করা হয়েছিল। যদিও ২০০৭ সালের পর আইসিসি ভেন্যুটি বাতিল করে। এরপর থেকে বিসিবি কিছু লোকবল রেখে ভেন্যুটিতে নিয়মিত কিছু খেলাধুলা পরিচালনা করে আসছিল। কিন্তু বিসিবির অসহযোগিতার কারণে স্টেডিয়ামটি সংস্কার, উন্নয়ন বা আন্তর্জাতিক মানের কোনো খেলা ১৬ বছরেও হয়নি।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার অসহযোগিতার অভিযোগের ব্যাপারে চিঠিতে বলা হয়, এ জেলা থেকে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট, স্কুল ক্রিকেট, জেলা ক্রিকেট দল, মহিলা ক্রিকেট দল একটি ভালো পর্যায়ে অবস্থান করছে এবং বগুড়ার খেলোয়াড় জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখছে। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার স্বার্থে জেলার একমাত্র ক্রিকেট মাঠ আমরা ব্যবহার করি। সেটিই একমাত্র অসহযোগিতার কারণ। মিথ্যা অপবাদ না দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধান করাই যথার্থ।

এদিকে, আগের দিন চিঠি দিয়ে স্টেডিয়ামটি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে গতকাল বিকেলে স্টেডিয়ামটি থেকে স্টাফসহ সব মালপত্র সরিয়ে নিয়েছে বিসিবি। তবে এ ব্যাপারে ক্রীড়া সংস্থাকে লিখিত কোনো নির্দেশনা দেয়নি বিসিবি। গত বুধবার এক মৌখিক নির্দেশের পর গতকাল বিকেলে সব মালপত্র সরানো হয়। সেইসঙ্গে ভেন্যু ম্যানেজারসহ সব স্টাফকে শুক্রবার ঢাকায় উপস্থিত হতে বলেছে বিসিবি।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে স্টেডিয়ামটি ব্যবহার নিয়ে স্থানীয় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে বিসিবির টানাপোড়েন চলছিল। বিসিবি তাদের পরিকল্পনামতো স্টেডিয়াম ব্যবহার করতে পারছিল না—এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বগুড়ার উইকেট নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিসিবি নতুন করে স্টেডিয়ামটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসেবে বিসিবির শীর্ষ কর্তারা স্টেডিয়াম পরিদর্শন করে নতুন আরও দুটি সেন্টার উইকেট এবং অনুশীলনের জন্য নতুন করে আরও চারটি উইকেট বানানো হয়। একই সঙ্গে খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমের পুরাতন আসবাব নতুন করে সাজানো হয়। দেওয়া হয় ঘাস কাটার নতুন যন্ত্র। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু সংস্কার পরিকল্পনা হাতে নেয় বিসিবি। কিন্তু হঠাৎ করেই বিসিবি স্টেডিয়ামটি থেকে তাদের সব কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার মৌখিক নির্দেশ পাঠাল।

স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার জামিলুর রহমান জামিল জানান, বিসিবি থেকে অফিসিয়াল কোনো চিঠি পাঠানো হয়নি। বুধবার মৌখিকভাবে সব মালপত্র ও স্টাফকে ঢাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। যেতে বিলম্ব হওয়ায় বৃহস্পতিবার কঠোর নির্দেশনা আসে বিসিবি থেকে। এই নির্দেশের পর দুপুর থেকে সব মালপত্র ট্রাকে বোঝাই করার প্রস্তুতি শুরু হয়। আপাতত মালপত্রসহ সব স্টাফকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর বেশি তিনি কিছু বলতে পারেননি।

বিসিবি সূত্র জানায়, বিসিবি ৮ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বগুড়ায় চার দিনের তিনটি ম্যাচ আয়োজন সূচি তৈরি করে। সূচি অনুযায়ী ৬ মার্চ টিমগুলো বগুড়ায় এসে ৭ মার্চ থেকে অনুশীলন শুরুর কথা। কিন্তু ১ মার্চ থেকে জেলা ক্রীড়া সংস্থা এই স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ শুরু করায় বিসিবির সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। ২৫ মার্চ পর্যন্ত স্টেডিয়াম ব্যবহারে অনড় অবস্থান নেয় জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এতে বিসিবি তার পূর্বনির্ধারিত তিনটি চার দিনের ম্যাচ অন্য ভেন্যুতে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বগুড়া থেকে বিসিবি সব স্টাফ ও স্টেডিয়ামে ব্যবহৃত মালপত্র ঢাকায় সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়।

বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মিলন জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। বিসিবি থেকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি।

মালপত্র সরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিসিবি মাঝেমধ্যেই মালপত্র নিয়ে যাওয়া-আসা করে। এটিও তেমনই কিছু।

এদিকে, বগুড়া থেকে আচমকা স্টেডিয়ামের সব মালপত্র এবং স্টাফ প্রত্যাহারের খবরে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা ও ক্রীড়া সংগঠকরা। বিসিবির সাবেক পরিচালক ও বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে তিলে তিলে ধ্বংস করা হচ্ছিল। এখন স্টেডিয়াম ধ্বংসের সেই কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়া হলো। আমরা বিসিবির এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

বিসিবি

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close