চারদিনের সফরে সোমবার পাবনায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি

দায়িত্ব গ্রহণের পর সোমবার (১৫ মে) প্রথম সফরে নিজ জেলা পাবনায় যাচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। আর তাকে বরণ করতে প্রস্তুত পাবনাবাসী। কৃতি সন্তানের চারদিনের এ সফর ঘিরে নতুন সাজে সেজেছে পাবনা। ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে সড়ক-মহাসড়কগুলো। শহরের প্রধান সড়ক সহজ আশপাশের সড়কে নির্মান করা হয়েছে অসংখ্য তোরণ। রাষ্ট্রপতির যাতাযাতের সড়ক ও পরিদর্শনের স্থানগুলো মেরামত, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, সৌন্দর্য্য বর্ধন করা হয়েছে। আলোকসজ্জা করা হয়েছে পুরো শহরজুড়ে।

রাষ্ট্রপতির এই সফর ঘিরে ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। শুধু দল নয়, সাধারণ মানুষের মাঝেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রপতিকে বরণ করতে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

পাবনা শহর ঘুরে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতি যে সার্কিট হাউজে থাকবেন সেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, সৌন্দর্য্য বর্ধন করা হয়েছে। হেলিকপ্টারযোগে যে স্টেডিয়ামে অবতরণ করবেন সেখানেও নেয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এছাড়াও পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণ, পাবনা প্রেসক্লাব, পাবনা ডায়াবেটিস সমিতি, সদর গোরস্তান, জেলা পরিষদ, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু পার্ক এবং স্কয়ার বাগানবাড়ি ও পারিবারিক কবরস্থানসহ রাষ্ট্রপতির সফরসূচির স্থানগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।

সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মঙ্গলার (১৬ মে) বিকেল ৩টায় পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে নাগরিক সংবর্ধনা। নাগরিক সংবর্ধনা সফল করতে স্কয়ার গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুকে আহ্বায়ক ও পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল মতিন খানকে সদস্য সচিব করে একটি নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সফরসূচি অনুযায়ী, ১৫ মে সকালে ঢাকা থেকে রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারযোগে পাবনা অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে পৌঁছাবেন। গার্ড অব অনার গ্রহণের পর বিশ্রাম নেবেন। এরপর বেলা সোয়া একটায় জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু চত্বরের নামফলক উদ্বোধন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতেত পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বেলা দেড়টায় তিনি আরিফপুর কবরস্থানে উপস্থিত হয়ে কবর জিয়ারত করবেন। এরপর স্কয়ার বাগানবাড়ির পারিবারিক কবরস্থান পরিদর্শন এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন শেষে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর সার্কিট হাউসে ফিরে রাতযাপন করবেন।

১৬ মে সকালে পাবনা বিসিকে স্কয়ারের একটি কারখানা উদ্বোধন, এরপর পাবনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেবেন। বেলা তিনটায় পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। এতে প্রায় আড়াই হাজার আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

১৭ মে সকালে পাবনা ডায়াবেটিক সমিতি পরিদর্শন ও শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিনোদন পার্ক পরিদর্শন করবেন। এরপর সার্কিট হাউসে রাত্রি যাপন করে ১৮ মে সকালে হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

এদিকে রাষ্ট্রপতির সফর ঘিরে পুরো পাবনা জেলাকে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ৩ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হবে। এসএসএফ, পিজিআর, ডিজিএফআই, এনএসআই, পাবনা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় অনুষ্ঠানস্থানগুলো পরিদর্শন ও তদারকি করছেন।

নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সদস্য সচিব আব্দুল মতীন খান বলেন, রাষ্ট্রপতি আমাদের গৌরব। তার সম্মান রক্ষার্থে আমরা যা যা করণীয় তাই করবো ইনশাল্লাহ। এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে নাগরিক সংবর্ধনার জন্য আমরা প্রস্তুত। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে একটি আনন্দঘন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

আহবায়ক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু বলেন, রাষ্ট্রপতি আমাদের পাবনার সন্তান। প্রধানমন্ত্রী আমাদের যে উপহার দিয়েছেন সেটি স্মরণীয় করে রাখতে রাষ্ট্রপতিকে স্মরণকালের সবচেয়ে জমকালো সংবর্ধনা দেবো আমরা। শুধু দেশবাসীই নয়, দেশের বাইরের মানুষও দেখবে আমরা আমাদের সন্তানকে কতোটুকু ভালোবাসি, কিভাবে সম্মান জানাই। এই লক্ষে পাবনাবাসী প্রস্তুত তাকে বরণ করতে।

প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী কোনো জেলা সফরে গিয়ে প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করার নজির নেই। সেখানে বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য মোঃ সাহাবুদ্দিন আমাদের মাঝে আসবেন, এজন্য আমরা আবেগ আপ্লুত। তাকে বরণ করতে আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, রাষ্ট্রপতির সফর ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু পুলিশ বাহিনীর প্রায় ১৯০০ সদস্য মোতায়েন থাকবে। পোশাকী পুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশ, স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। তার সফরের স্থানগুলো এবং যেসব পথে দিয়ে যাতায়াত করবেন সবদিকে কঠোর নজরদারি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। সবমিলিয়ে রাষ্ট্রপতির সফর সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ করতে সকল ধরনের নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সফর ঘিরে কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম