• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

কালীগঙ্গা নদী থেকে বালু তোলায় ফসলি জমি বিলীন, ইজারা বাতিলের দাবি

প্রকাশ:  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৪৫
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় কালীগঙ্গা নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এতে বেশ কিছু কৃষকের ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া নদীতীরবর্তী বসতবাড়িসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বালুমহালের ইজারা বাতিল এবং অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা বন্ধে নদীর পাড়ে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।

শনিবার দুপুরে বালু উত্তোলন বন্ধে ইজারা বাতিলের দাবিতে আন্ধারমানিক গ্রামে নদীর পারে ব্যানার নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন আন্ধারমানিক ও জয়নগর গ্রামের লোকজন। তাঁরা নদীর ধারে এক পাশে সারি করে দাঁড়িয়ে যান।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা যায়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ থেকে আসন্ন ৩০ চৈত্র পর্যন্ত মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার বেউথা-পৌলী বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের দেওয়া সম্ভাব্য ইজারা মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩ কোটি ২৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। মেসার্স জাহিদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বালুমহালটি ইজারা পায়। মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিক।

মানববন্ধনে আন্ধারমানিক গ্রামের কৃষক আবদুল খালেক (৭২) বলেন, ‘তাঁরা (ইজারাদার) সমানে (দেদার) নদী থেকে ড্রেজার (খননযন্ত্র) দিয়া বালু কাটতাছে। আমাগো সব ফসলি জমি নদীতে ভাইঙ্গা গেতাছে। আমার ৪৫ শতক জমির মধ্যে ১৫ শতক জমি নদীতে চলে গেছে। কৃষক মানুষ আমরা, ওগো (ইজারাদার) বাধা দিলেও শোনে না। আমাগো উল্টো ভয় দেখায়।’

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলেন, মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আন্ধারমানিক ও জয়নগর এলাকায় কালীগঙ্গা নদী থেকে শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে শক্তিশালী খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীতে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। এ ছাড়া দুই গ্রামের শত শত বিঘা ফসলি জমি, একটি কবরস্থান ও মসজিদ এবং শতাধিক বসতবাড়ি নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। নদীর তীরবর্তী এসব ফসলি জমিতে ভুট্টা, খেসারি, শর্ষে, মাষকলাই, তিলসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করেন কৃষকেরা। উত্তোলন করা বালু কার্গোতে করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন।

জয়নগর গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ (৫৫) বলেন, ‘ইজারাদারের কথা বইল্যা ড্রেজার দিয়া নদী থ্যাইকা মাটি কাইটা নেওয়ায় আন্ধারমানিক, জয়নগর ও পৌলী এলাকার নদীতীরের জমিগুলো শেষ হইয়্যা (হয়ে) যাইতাছে। ওরা নদী তো কাটে না, জমি কাইটা ফাইলতাছে। নদী কাটতে কাটতে এমন অবস্থা হইছে, এহন বসতবাড়ি ভাঙার উপক্রম হইছে। বাপ-দাদার ১৮ বিঘা জমি আমরা চাষবাস কইরা খাইতাছি। ড্রেজার দিয়ে ছয়-সাত বছরে নদীর মাটি কাটায় ১৪ বিঘা ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। আমাগো এই ক্ষতির দায়ভার কে নিব, কে আমাগো ক্ষতিপূরণ দিব? নদী থেকে আর বালু–মাটি তুলতে দেওয়া যাবে না।’

এ বিষয়ে ইজারাদার জাহিদুল বলেন, তিনি সরকারের কাছ থেকে বৈধভাবে ইজারা নিয়ে নির্ধারিত স্থান থেকে বালু তুলছেন। বালু তোলার কারণে সেখানে নদী ভাঙছে না।

পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু মোহাম্মদ নাহিদ বলেন, খননযন্ত্র দিয়ে এই বালু–মাটি কাটা ও ইজারা দেওয়া বন্ধ না হলে কৃষকদের বিঘা বিঘা ফসলি জমি, কবরস্থান, মসজিদসহ গ্রামের শতাধিক বসতবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়বে। জনস্বার্থে এই এলাকাগুলো বালুমহাল ইজারার অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেখানে পরবর্তী সময়ে বালুমহালের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কৃষিজমি এবং কৃষকের ক্ষতি হলে সেখানে ইজারা দেওয়া হবে না।

মানিকগঞ্জ সদর,বালুনদী,মানিকগঞ্জ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close