• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

চাঁদপুরে জাল দলিলে প্রতারণা; জনভোগান্তি চরমে!

প্রকাশ:  ২৭ মার্চ ২০১৯, ২০:৫৭
চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুরে জাল দলিল প্রতারক চক্রের প্রতারণায় বছরের পর বছর বিভ্রান্তি আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জাল দলিলের কারণে একটি নিষ্কণ্টক জমি নিয়েও আদালত পাড়ায় আসা যাওয়া করতে করতে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

সাধারণ মানুষ যেমনি মানসিক যন্ত্রণার স্বীকার হচ্ছে তেমনি আর্থিক ক্ষতিও নেহায়েত কম নয়। এছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃংখলা প্রকট আকার ধারণ করছে দিনদিন। চাঁদপুরের কিছু অসাধু ব্যক্তি আর প্রভাবশালী এসব জাল দলিল তৈরি করছে। কিছু সহজসরল মানুষ যেমনি তাদের ফাঁদে পড়ছে তেমনি দুর্বিসহ যন্ত্রণা আর নানানমুখী মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে।

এক্ষেত্রে প্রতারক চক্র আর্থিক ও সামাজিক দিকে থেকে বিত্তশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ খুব সহজে তাদের সাথে পেরে উঠে না। সুতরাং বছরের পর বছর বয়ে বেড়াতে হচ্ছে জাল দলিল যন্ত্রণা। কোর্ট বারান্দায় হাতে দলিল নিয়ে সহ্য করতে হয় নিদারুণ কষ্ট।

একটি জাল দলিল নিয়ে অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, ১৯৪৯ সালে কুমিল্লা জেলার অধীনে ছিল তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমা। কুমিল্লা জেলা রেজিষ্ট্রারের তথ্য মতে, ১৯৪৯ সালে মোট দলিল হয়েছে ১ লাখ ৪শ’ ৭৯ টি। অথচ একই বছরের ২৬ আগষ্টে একটি দলিল পাওয়া গেলো যার নম্বর ১লাখ ২ হাজার ৩শ’ ১৬। যার কোনো প্রকার তথ্য প্রমাণ নেই কুমিল্লা সদর রেকর্ড অফিসে। অর্থাৎ এই নম্বরের দলিলটি জাল স্পষ্ট ভাষায় জানান কুমিল্লা সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের প্রধান রেকর্ড কিপার মোঃ আলী আক্কাছ।

আলী আক্কাছ বলেন, ১৯৪৯ সালে তৈরি ১২৩১৬ নম্বর দলিলের সাথে ভলিয়মের কোনো মিল নেই। অর্থাৎ উল্লেখিত দলিলে ভলিয়ম নম্বর দেয়া হয় ১০০। অথচ সে বছর ভলিয়ম হয়েছে সর্বমোট ছিলো ৮৫টি। তাছাড়া ওই বছর এতো দলিল তৈরি হয়নি। অর্থাৎ এটি জাল দলিল। এমন বহু ভুয়া দলিল নিয়ে এসে আমাদের হয়রানি করছে। আমরাও অনেক সময় বিভ্রান্ত হই। সাব রেজিস্ট্রি অফিসের আশপাশেই একটি চক্র সক্রিয় আছে যারা সাধারণ মানুষকে জাল দলিল তৈরি করে দেয়। এক্ষেত্রে মানুষকেই সাবধান হতে হবে। কারণ কখনো না কখনো জাল দলিল প্রমাণ হয়ে যাবেই। ১২৩১৬ নম্বর দলিলের সিল সই সব কিছুই জাল বলে নিশ্চিত করেন কুমিল্লা সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের এই প্রধান রেকর্ড কিপার মোঃ আলী আক্কাছ।

অথচ ১২৩১৬ নম্বর দলিলে ৪২ শতাংশ ভূমির ওপর চাঁদপুর ল্যান্ড সার্ভে ট্র্যাইবুনালে মামলা করে একতরফা রায় নেয় চাঁদপুর শহরের দক্ষিণ তরপুরচন্ডী এলাকার মৃত মহব্বত আলী দেওয়ানের ছেলে ফজলুল হক দেওয়ান, মফিজুল ইসলাম দেওয়ান ও রুহুল আমিন দেওয়ান। যার মামলা নম্বর ১০৯১। পরবর্তিতে অপরপক্ষ অর্থাৎ ভূমির প্রকৃত মালিক পড়ে চরম ভোগান্তিতে। জমির প্রকৃত মালিক ফারুক হোসেন গাজী মামলার রায় হাইকোর্ট থেকে খারিজ করে আনেন। পরে তিনি ওই দলিল বাতিলের জন্যে চাঁদপুর সদর কোর্টে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে চলামান রয়েছে। শুধু এ একটি ঘটনা নয়, এমন বহু ঘটনা বিদ্যামান রয়েছে। শুধু চাঁদপুর শহর নয় প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে এ চক্রের কেরেশমতি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ভোক্তভোগী দাবি করে বলেন, ভুয়া দলিল তৈরি চক্র এবং যারা দলিল ব্যবহার করে মামলা মোকদ্দমায় লিপ্ত হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। কারণ তারা দেওয়ানী মামলার ওসিলায় ফৌজদারি অপরাধের মতো কার্যক্রম চালায়। এসব অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসলে প্রতারক চক্র কিছুটা হলেও উৎসাহ হারাবে। সাধারণ মানুষ হয়রানি থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে।

চাঁদপুর জর্জ কোর্টের বেশ কয়েকজন আইনজীবী জানান, চাঁদপুর জেলা জজ আদালতে এমন দলিল বাতিল মামলা কয়েক শ’চলমান আছে। এক্ষেত্রে আদালত মামলা রুজুর দিন একটু বিচক্ষণতার পরিচয় দিলে অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট রেকর্ড অফিসে দলিল তল্লাশি দিলেই আসল নকল সনাক্ত করতে পারে। এতে ভুয়া ও সঠিক দলিলের তথ্য বেরিয়ে আসবে। কমে যাবে এসব মিথ্যা মামলার হার। এমন চক্র শুধু চাঁদপুরে নয় সারা দেশেই সক্রিয় আছে বলে জানান কুমিল্লা জেলা রেজিস্ট্রার মাহফুজুর রহমান খান। তিনি বলেন, ভূমির সকল প্রক্রিয়া ডিজিটাইলেজশন করা হলেই বন্ধ হবে এমন প্রতারণা। তবে বিচারক এসব মামলার ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থাতেই ভলিয়ম তলব করতে পারে বলে মত দেন এ কর্মকর্তা।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির জাল দলিল প্রসঙ্গে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত স্বাপেক্ষো চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু আমারা এ ধরণের অভিযোগ পাই না বললেই চলে। আর এ চক্র শুধু চাঁদপুরে নয় সারা দেশেই তারা সক্রিয় আছে। বিশেষত ভূমির মূল্য বৃদ্ধির কারণে এখন ওই চক্র আরো বেশি তৎপর রয়েছে। দিন যত গড়াচ্ছে মানুষ ততো বাড়ছে খন্ড খন্ড হচ্ছে জমি বাড়ছে দাম। সাথে বাড়ছে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ। এমন সময়ে সরকার দ্রুত এ দপ্তরে বিশেষ দৃষ্টি দেবে। আর সমাজে বিশৃংখলা এড়াতে এমন উদ্যোগ হবে দেশের সর্বজন প্রশংসনীয়। এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

পিবিডি/আর-এইচ

চাঁদপুর

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close