অস্ত্রোপচারে আলাদা করা লাবিবা-লামিসা ভালো আছে
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা জমজ দুই বোন লাবিবা-লামিসার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। চিকিৎসক বলছেন, তাদের অক্সিজেন লেভেল ও ব্লাড প্রেসারসহ অন্যান্য সবকিছু ভালো আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তাদের রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার ( ২২ মার্চ) শিশুদের বাবা লাল মিয়া ও মা মনুফা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, সকালে লাবিবা ও লামিসাকে চিকিৎসকের পরামর্শে পানি খাওয়ানো হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় তারা আছে। এক রুমে থাকলেও তাদের পৃথক স্থানে রাখা হয়েছে। এখনও দুজন দুজনকে খুঁজছে।
সম্পর্কিত খবর
মেডিক্যাল বোর্ড ও শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফ উল হক কাজল সাংবাদিকদের বলেন, আলাদা হওয়া জোড়া দুই বোন লাবিবা ও লামিসা ভালো আছে। তাদের অক্সিজেন লেভেল ও ব্লাড প্রেসারসহ অন্যান্য সবকিছু ভালো আছে। সকালে তাদের পানি খাওয়ানো হয়েছে। সেটা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে লিকুইড খাবার তাদের দেয়া হবে। এছাড়া সবকিছু ঠিক থাকলে তাদের ওয়ার্ডে নেয়া হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মজার ব্যাপার হলো জ্ঞান ফেরার পর পর লাবিবা বলে, ‹ও কোথায়›?। আপনারা জানেন, জন্মের পর থেকে তারা জোড়া লাগানো অবস্থায় ছিল। তাই লামিসাকে দেখতে না পেয়ে এ কথা বলে। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম তাদের আইসিইউ লাগতে পারে। যেহেতু জ্ঞান ফেরার পর তারা পা নাড়াতে পেরেছে সেহেতু তাদের আর আইসিইউ লাগছে না। এখন আমরা তাদের অবজারভেশনে রেখেছি। যেহেতু লাবিবা-লামিসা যোনিপথ ও মলদ্বার একসঙ্গে জোড়া লাগানো ছিল সেটা আমরা আলাদা করেছি। তবে লামিসার যোনিপথ ও মলদ্বারে কিছু সমস্যা রয়েছে পরবর্তীতে আমরা সার্জারি করে এগুলো স্বাভাবিক করে দেব।
তিনি বলেন, চারটি বিভাগের সমন্বয়ে আমরা সফলভাবে অস্ত্রোপচার করতে পেরেছি। অ্যানেসথেসিয়া, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি ও নিউরো সার্জারি বিভাগের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা এ অপারেশনে অংশ নেন।
লাবিবা ও লামিসার বয়স প্রায় তিন বছর। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল তাদের জন্ম হয়। বাড়ি নীলফামারী জেলায়। তাদের বাবা দিনমজুর। জন্মগতভাবে তারা জোড়া লাগানো। তাদের দুজনের মলদ্বার একটি। এর আগে সার্জারির মাধ্যমে পৃথক মলদ্বার তৈরি করা হয়। ঢামেক হাসপাতাল বিনামূল্যে এ দুই শিশুর চিকিৎসা করছে।
লাল মিয়া বলেন, আমাদের খুব ভাল লাগছে। গ্রামে খবর পৌঁছানো হয়েছে। সেখানে থাকা আত্মীয়-স্বজনরা খুব আনন্দে আছে। লাবিবা-লামিসাকে দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। সবাই আমার লাবিবা-লামিসার জন্য দোয়া করবেন যেন সম্পুর্ণ সুস্থ করে গ্রামে ফিরতে পারি। ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক থেকে শুরু করে চিকিৎসক নার্স সবাই আমার লাবিবা-লামিসার জন্য কষ্ট করেছেন।
গত সোমবার মেডিক্যাল বোর্ডের মাধ্যমে ৩৮ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে ঢামেক হাসপাতালে জোড়া লাগানো দুই বোন লাবিবা ও লামিসার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা হয়। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা সময় ধরে সফল অস্ত্রোপচার শেষ করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ৩৮ জন সার্জন মিলে লাবিবা-লামিসাকে আলাদা করে। এতে অংশ নিয়েছিল শিশু সার্জারি বিভাগ ছাড়াও নিউরোসার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, রেডিওলোজি, ইউরোলোজি, অর্থোপেডিকস, সার্জারি ও এনেসথেসিওলোজি বিভাগের চিকিৎসকরা।
পূর্বপশ্চিম- এনই