• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নীলফামারী সদর হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট, হৃদরোগ বিভাগে তালা

প্রকাশ:  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৪৬ | আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৫০
নীলফামারী প্রতিনিধি

নীলফামারী সদর আধুনিক ১০০ শয্যার হাসপাতালে ২২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১৩ জন। এর মধ্যে জরুরি বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন একজন, বহির্বিভাগে আটজন এবং বাকি বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগী দেখেন মাত্র চারজন চিকিৎসক।

তবে প্রতিদিন ওয়ার্ডে ভর্তিসহ অন্তত তিন শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দিতে হয় হাসপাতাল থেকে। চিকিৎসক কম থাকায় সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগী।

সম্পর্কিত খবর

    এদিকে সরঞ্জামাদি ঠিক না থাকা ও জনবল সংকটের কারণে দীর্ঘদিন থেকে তালা পড়ে আছে হৃদরোগ বিভাগে।

    সূত্র জানায়, হাসপাতালে পুরনো একটি আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন স্থাপন করা হলেও সেটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই রোগীরা বাইরে গিয়ে চড়া মূল্যে আল্ট্রাসনো করে আসছে।

    এছাড়াও প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে জনবল সংকটে তালাবন্ধ হয়ে আছে কার্ডিওলজি (হৃদরোগ) বিভাগটি। ফলে বাস্কবন্দি অবস্থায় আছে ওই বিভাগের ২৫ লাখের বেশি মূল্যের সরঞ্জামসহ ১০ শয্যার ইউনিটটি।

    এ ব্যাপারে হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) আসাদ আলম বলেন, এই বিভাগটি চালাতে দক্ষ জনবলসহ একেবারে আলাদা সবকিছু দরকার। কিন্তু এখানে কিছুই নেই। এই বিভাগে মাত্র একজন চিকিৎসক রয়েছেন, যা দিয়ে ওই ইউনিট চালানো কোনমতেই সম্ভব না। এই ইউনিট চালাতে একজন বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল কর্মকর্তাসহ ১০ জন চিকিৎসক ও ২০ জন নার্স প্রয়োজন। এছাড়াও আইসিইউ এবং সিসিইউ এর জন্য প্রয়োজন আলাদা ব্যবস্থা কিন্ত কিছুই নেই এখানে।

    তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ২-৪ জন রোগীকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হয়। তাদের চিকিৎসা দেওয়ার মত সাধ্য নেই আমাদের। পাশাপাশি অকেজো হয়ে পড়ে আছে মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলো।

    হাসপাতালের রেডিওলোজিস্ট রেজাউল আলম বলেন, বর্তমানে এটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। মাঝে মাঝে মেশিনটি ঠিক করে কিছুদিন চালানো যায়। তবে তা আবার নস্ট হয়ে যায়। জোড়াতালি দিয়ে চলছে এক্সরে মেশিনটি। এটিরও বেহাল দশা। এসব পুরোনো মেশিনপত্র দিয়ে সঠিক পরীক্ষ করা সম্ভব না।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, তিন শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও চিকিৎসক সংকটে তারা মানসম্মত চিকিৎসা দিতে পাচ্ছেন না। আর জরুরি বিভাগে মাত্র একজন মেডিক্যাল কর্মকর্তা থাকায় বেশিরভাগ সময় উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। ফলে সঠিক ও মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। তৃতীয় ও চতৃর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকট থাকায় দাপ্তরিক কাজসহ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।

    হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডাক্তার ওয়ার্ডের রোগী দেখা শেষ করে সিরিয়ালের রোগী দেখতে শুরু করেন। সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একপর্যায়ে আগে সিরিয়াল পাওয়া যায়। এরপর ওষুধ নিতে হয়। লাইনে ওষুধ নিতে রোগীর ভিড়ে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়।

    হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আসাদ আলম জানান, হাসপাতালের ২২টি পদের বিপরীতে ৯টি পদই শূন্য রয়েছে। আর মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে ও জরুরি বিভাগসহ বহির্বিভাগে পরিপূর্ণ সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কারণ ৫০ শয্যার লোকবল দিয়ে চলছে ১০০ শয্যার হাসপাতালটি।

    জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী ১০০ শয্যার হাসপাতালে লোকবল থাকার কথা প্রায় ১৫০ জন। সেখানে ৫০ শয্যার হাসপাতালে ২২ জন চিকিৎসকের বিপরীতে রয়েছে ১৩ জন, নার্স ৭২ জনের বিপরীতে ৬২ জন, ফার্মাসিস্ট ৩ জনের বিপরীতে একজন, ড্রাইভার ২ জনের বিপরীতে একজন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ডেন্টাল একজনও নেই। নিরাপত্তা প্রহরী, আয়া, ওয়ার্ড বয়ের পোস্ট সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় সেগুলো খালি রয়েছে।

    সদর হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাসপাতালে ওষুধের সংকট নেই। তবে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এতে রোগীরা পরিপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

    সিভিল সার্জন ডা. রনজিৎ কুমার বর্মন জানান, সদর হাসপাতাল ছাড়াও পাঁচ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ৭০ শতাংশ পদ খালি আছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এই সংকটের কথা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি।

    তিনি আরও বলেন, এই হাসপাতালে ১০০ শয্যার লোকবল নেই, ৫০ শয্যার লোকবল দিয়ে চলে এই হাসপাতাল। আবার সদ্য নির্মিত ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি চালু হতে যাচ্ছে। সেখানে প্রায় ১৯৩ জন স্ট্যাফের প্রয়োজন হবে।

    পিবিডি/আর-এইচ

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close